স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আলোচিত ধর্ষণের ঘটনাটি সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিচার করবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
রোববার (২৯ মার্চ) রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, মুরাদনগরে যে জঘন্য ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এ ঘটনায় দেশের যে কোনো নাগরিকের মতো আমরা সবাই মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রধান আসামিসহ ধর্ষণের শিকার নারীর ছবিগুলো যারা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটা করেছে তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এরই মধ্যেই ধর্ষণ সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে সে আইনের সংশোধন করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে মাগুরার ধর্ষণের ঘটনার বিচার দেখেছেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আসিফ নজরুল বলেন, আজকের বৈঠকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ফৌজদারি কার্যবিধির একটা সংশোধন হয়েছে। আমরা নিজেরাই খুব বিব্রত, আমরা এগুলো সবাইকে জানানোর চেষ্টা করি। তার মধ্যে একটা হচ্ছে ভুয়া এবং মিথ্যা মামলা করা, আরেকটি হচ্ছে মিথ্যা মামলা করে অর্থাৎ হয়তো মামলাটি হয়তো সঠিক কিন্তু সেখানে অনেক ব্যক্তিকে মামলায় আসামি করে এক ধরনের মামলা বাণিজ্য করা। সেটার থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমরা বহুবার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশে যত বড় বড় আইনজীবী আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে, অনেকের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা একটি সিআরপিসি-তে একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছি।’
তিনি বলেন, ‘একটা হত্যা মামলা যখন দায়ের করা হয় সেটা তদন্তে দুই-চার বছর লাগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একধরনের মামলা বাণিজ্য থাকে। এখানে যারা আসামি হন তারা কয়েকবছর ধরে একটা আশঙ্কার মধ্যে থাকেন যে, কখন গ্রেফতার হবে বা মামলা বাণিজ্য হয় কিনা। সেটার থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমরা একটা নতুন বিধান করেছি। এই নতুন বিধানে বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার বা পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোনও পুলিশ কর্মকর্তার এখতিয়ারাধীন কোনও মামলার বিষয়ে উনার যদি মনে হয় করা যৌক্তিক, তাহলে উনি তদন্ত কর্মকর্তাকে বলতে পারেন যে মামলার তদন্তের বিষয়ে একটা প্রাথমিক রিপোর্ট দিতে।
সেই প্রাথমিক রিপোর্ট যখন তদন্ত কর্মকর্তা জমা দেবেন তখন পুলিশ কমিশনার কিংবা পুলিশ সুপার তাকে বলবেন যে, এই প্রাথমিক রিপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দিতে। জমা দেওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যদি মনে হয় মামলার মধ্যে ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে তার মধ্যে ৯০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগই আসলে নেই, সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে ট্রায়াল স্টেজেই ওই মামলা থেকে আসামিদের মুক্ত করে দিতে পারবেন।
আসিফ নজরুল বলেন, এই সংশোধনী কার্যকর হলে আদালত এবং পুলিশ প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করে যেসব মামলায় গ্রেফতার বাণিজ্য বা মামলা বাণিজ্য হচ্ছে, অসংখ্য লোককে আসামি করা হচ্ছে, প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে যাদের বিরুদ্ধে কোনও প্রকার প্রমাণ পাওয়া যাবে না, তাদের আদালত বিচার শুরু করার আগে মুক্তি দিতে পারবে। এর ফলে ভুয়া মামলা থেকে আশা করি, রেহাই পাওয়া যাবে। তার মানে এই না যে তদন্ত থেমে থাকবে।
তিনি বলেন, তদন্ত শেষ হওয়ার স্টেজে পুলিশ যদি দেখে যাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে আসলেই পরবর্তী সময়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে, পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার সময় সেসব ব্যক্তির নাম অন্তর্ভুক্ত করে জমা দিতে পারবে।
রিপোর্টার্স২৪/ঝুম