আশিস গুপ্ত, নতুন দিল্লি : আহমেদাবাদে প্রাণঘাতী ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই, ভারতগামী দুটি বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমান, একটি হংকং থেকে ও অপরটি লন্ডন থেকে মাঝ আকাশে সন্দেহজনক প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। ফলে বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান মডেলটি নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
সোমবার (১৬ জুন) সকালে হংকং থেকে দিল্লিগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই ৩১৫ উড়ানের মাত্র ৯০ মিনিট পরেই হংকংয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়, একটি সম্ভাব্য প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে।
ফ্লাইটটি সকাল ৯:৩০-এ যাত্রা শুরু করেছিল, কিন্তু মাঝপথে পাইলটরা সমস্যার ইঙ্গিত পাওয়ায় অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। হংকং বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণের পর যাত্রী ও ক্রুদের সরিয়ে নেওয়া হয় এবং বিমানটিকে বিস্তারিত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
এয়ার ইন্ডিয়ার একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, এটি ছিল একটি অতিরিক্ত সতর্কতামূলক পদক্ষেপ এবং যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়।
এআই ৩১৫-এর ঘটনার মাত্র কয়েকঘন্টা ব্যবধানে, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের চেন্নাইগামী ফ্লাইট বিএ ৩৫ লন্ডন থেকে রওনা হয়ে মাঝ-আকাশে একটি সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং শেষপর্যন্ত হিথ্রো বিমানবন্দরে ফিরে আসে। এই বিমানটিও ছিল বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। ফ্লাইটটি দুপুর ১২:৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও ১:১৬ মিনিটে উড্ডয়ন করে, এবং প্রায় দুই ঘণ্টা আকাশে থাকার পর এটি ফিরে আসে। যদিও ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ যাত্রী সংখ্যা বা সমস্যার প্রকৃতি প্রকাশ করেনি, তারা এটিকে “সাধারণ সতর্কতা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং জানিয়েছে যে, সব যাত্রী ও ক্রু নিরাপদে নামিয়ে আনা হয়েছে।
বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মূলত দীর্ঘপথের বাণিজ্যিক বিমান হিসেবে পরিচিত এবং এটির উন্নত জ্বালানি-দক্ষতা ও যাত্রীসুবিধার জন্য বিখ্যাত। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে একাধিকবার এর প্রযুক্তিগত ত্রুটি সামনে এসেছে। বিশেষ করে ব্যাটারি, ইঞ্জিন, কেবিন প্রেসার ও সেন্সর সংক্রান্ত সমস্যার খবর বারবার উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। এই মডেলের বিমান নিয়ে অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সহ বিভিন্ন দেশে প্রযুক্তিগত সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
বর্তমানে ভারতীয় আকাশসীমায় বোয়িং ৭৮৭ পরিচালনার দায়িত্ব মূলত এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগোর উপর। ২০২৫ সাল পর্যন্ত এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে ৩০টি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার রয়েছে, যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রুটে নিয়মিত ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি যে ধরনের সমস্যা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। একাধিক দুর্ঘটনা ও প্রযুক্তিগত ত্রুটি বোয়িং-এর উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
আন্তর্জাতিক এভিয়েশন মহলেও আলোচনায় এসেছে যে, সম্ভবত এই মডেলের বিমানগুলির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রযুক্তিগত পর্যালোচনার মানোন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।
রিপোর্টার্স২৪/আরএইচ