ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : ইসরাইলের সাথে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে ইরান। দেশটির রক্ষণশীল সংসদ সদস্য ইসমাইল কসারি এ মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছে ইরানি বার্তাসংস্থা আইআরআইএনএন।
বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্যপথগুলোর একটি হলো হরমুজ প্রণালী। এটি পারস্য উপসাগরের একমাত্র সামুদ্রিক প্রবেশপথ, একদিকে ইরান আর অপরদিকে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ প্রণালী পারস্য উপসাগরকে গালফ অফ ওমান এবং ভারত মহাসাগরের সাথে যুক্ত করে।
প্রশ্ন উঠেছে, ইরান যদি হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয় তাহলে বিশ্বজুড়ে এর প্রভাব কী হবে? কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন বিশ্বের মোট খরচ হওয়া তেলের প্রায় ২০ শতাংশ হরমুজ প্রণালীর মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। প্রণালীর সংকীর্ণতম স্থান মাত্র ৩৩ কিলোমিটার প্রশস্ত, কিন্তু পানিপথের জাহাজ চলাচলের পথগুলো আরো সংকীর্ণ। ফলে এটি আক্রমণ ও বন্ধ হওয়ার হুমকির ঝুঁকিতে থাকে।
আল জাজিরা বলছে, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে বিশ্বজুড়ে তেলের দাম বাড়বে আশঙ্কাজনকভাবে। এছাড়াও যুদ্ধ আরো বিস্তৃত হওয়ার ঝুঁকিও তৈরি করবে।
১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সালের মধ্যে ইরান-ইরাক সংঘাতের সময় উভয় দেশই উপসাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করেছিল, যা ট্যাঙ্কার যুদ্ধ নামে পরিচিত। কিন্তু হরমুজ কখনোই সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়নি। ওই সংঘাতে উভয়পক্ষের লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়েছিল।
সম্প্রতি ২০১৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম মেয়াদে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজাইরা উপকূলের কাছে চারটি জাহাজে হামলা হয়। ওয়াশিংটন এই ঘটনার জন্য তেহরানকে দায়ী করলেও ইরান তা প্রত্যাখ্যান করে।
সংঘাতের মধ্যেই চাপ প্রয়োগের জন্য জাহাজ চলাচলের পথে আক্রমণ দীর্ঘদিন ধরেই হয়ে আসছে। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরের প্রবেশপথ বাব আল-মানদেব প্রণালীতে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও সাগরপথে আফ্রিকা ঘুরে বিকল্প পথে যাওয়া সম্ভব, হরমুজ প্রণালীর ক্ষেত্রে এমন কোনো বিকল্প নেই।
হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে জ্বালানির সরবরাহ কমে গিয়ে বিশ্ববাজারে তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে, যা জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভর করে না এমন দেশগুলোকেও প্রভাবিত করবে।
তবে ইরান আদৌ প্রণালীটি বন্ধ করার সক্ষমতা বা ইচ্ছা রাখে কি-না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। কারণ এ পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সামরিক প্রতিক্রিয়া আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে আঞ্চলিক নৌঘাঁটিতে শক্তিশালী নৌবাহিনী মোতায়েন করেছে।
শুক্রবার ইরানের সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক স্থাপনা এবং আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরাইল। এর জবাবে ইরান শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। যদিও ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে ইসরাইলকে সাহায্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র, তবুও ওয়াশিংটন সরাসরি ইরানে আক্রমণ করেনি। মার্কিন কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, ইসরাইলের হামলার সাথে ওয়াশিংটন জড়িত ছিল না।
তেহরানও এ অঞ্চলে মার্কিন সেনাবাহিনীর ঘাঁটি লক্ষ্যবস্তু করেনি। তবে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে এবং এর ফলে ট্রাম্প সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে।
রিপোর্টার্স২৪/এম/এস