বিশেষ প্রতিনিধি, jhuum biswas।।
রিপোর্টার্স২৪ ডেস্ক :
বাংলাদেশের যুবকদের জন্য আশার আলো হয়ে আসছে প্রকল্প ‘এমপাওয়ারিং অ্যাকশনস ফর রেজিলিয়েন্ট নিউ জেনারেশন (আর্ন)’। এই প্রকল্প শুধু একটি কর্মসংস্থানের যন্ত্র নয় বরং এটি এক রাষ্ট্রীয় স্বপ্ন, যেখানে যুব শক্তিকে দক্ষতা, নেতৃত্ব ও আত্মনির্ভরতার পথে হাঁটানো হবে পরিকল্পিতভাবে।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের নেতৃত্বে শুরু হওয়া আর্ন প্রকল্পের লক্ষ্য ২০২৮ সালের মধ্যে ৫ লাখ নারীসহ ৯ লাখ তরুণ-তরুণীকে উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা। এই প্রকল্পটি একদিকে যেমন প্রশিক্ষণ ও চাকরির সুযোগ তৈরি করবে, তেমনি তরুণদের আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করবে উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী বিপুল যুব জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেকেই রয়েছেন ‘নিট’ অবস্থায়। অর্থাৎ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ বা কর্মসংস্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। বিশেষ করে যুব নারীদের ক্ষেত্রে এই হার প্রায় এক তৃতীয়াংশ। আর্ন প্রকল্প এই গোষ্ঠীকেই মূল কেন্দ্রবিন্দুতে এনে পরিবর্তনের প্রথম ধাপটি শুরু করছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রতি ১০০ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্তের মধ্যে অন্তত ৫৫ জন হবেন নারী। এই নারীরা গ্রাম, শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তাদের জন্য থাকবে পৃথক প্রশিক্ষণপাঠ, সামাজিক অন্তর্ভুক্তির কৌশল, আত্মবিশ্বাস তৈরির আয়োজন ও মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা।
আর্ন প্রকল্পে যেসব খাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, তা হবে সময়ের চাহিদা ও দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায়: তথ্যপ্রযুক্তি ও ফ্রিল্যান্সিং। সবুজ প্রযুক্তি। কৃষিভিত্তিক পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ। সৌর শক্তি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি। হস্ত ও কুটির শিল্প। গার্মেন্টস সহায়ক খাত। সেবা ও বিপণন খাত।
শুধু প্রশিক্ষণ নয় এই প্রকল্পে উদ্যোক্তাদের জন্য থাকবে ব্যাংক-বহির্ভূত ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা, ব্যবসায়িক পরামর্শ এবং পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পরিপূর্ণ সহায়ক কাঠামো। প্রশিক্ষণ শেষে যুবরা চাইলে নিজেরাই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন, যাতে তৈরি হয় কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবাহ।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে আমাদের যুব সমাজ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই শক্তির বড় একটি অংশ আজও কর্মবিমুখ চাকরি নেই, প্রশিক্ষণ নেই, সুযোগ নেই। আর্ন প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা সেই ‘নিট’ তরুণদের বিশেষ করে পিছিয়ে থাকা যুব নারীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই, যেন তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই গড়ে নিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্প শুধু চাকরির ব্যবস্থা নয়, বরং এটি আত্মকর্মসংস্থান এবং নেতৃত্ব তৈরির এক প্ল্যাটফর্ম। প্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব খাত, ও নারী উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে এই কর্মসূচি বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়নের পথে একধাপ এগিয়ে দেবে।
সমাজিক অন্তর্ভুক্তি ও মানসিক সহায়তা : শুধু অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নয়, আর্ন প্রকল্প গুরুত্ব দিচ্ছে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, মানসিক স্বাস্থ্য, ও ব্যক্তিত্ব বিকাশে। অংশগ্রহণকারীদের জন্য থাকবে- স্থানীয় কমিউনিটি কাউন্সেলিং সেবা, ক্যারিয়ার গাইডেন্স ও মেন্টরশিপ, অনলাইন তথ্য সহায়তা প্ল্যাটফর্ম, নারী-বান্ধব কর্মপরিবেশ গঠনে পরামর্শ, পারিবারিক বাধা মোকাবিলার কৌশল ও সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরির সুযোগ।
বিশেষ করে যুব নারীদের জন্য থাকবে আলাদা মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ, যা আত্মবিশ্বাস গঠনে সহায়ক হবে।
বাজেট: সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার অর্থায়নে পর্যবেক্ষণ: ডিজিটাল ট্র্যাকিং, ফিল্ড রিপোর্ট, ও স্বতন্ত্র মূল্যায়ন। এই প্রকল্প ৬টি মূল ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ প্রদান করবে এবং ‘নিট’ জনগোষ্ঠীর উপযোগী করে সাজানো হবে প্রতিটি ধাপ।
অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. শামিমা করিম বলেন, যুব জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার জন্য আর্ন প্রকল্প নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী প্রয়াস। নারীদের বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি এটিকে আরও সময়োপযোগী ও প্রগতিশীল করে তুলেছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের ‘নিট’ তরুণদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই নারী। এই নারীদের কর্মে ফেরাতে পারলে দেশের জিডিপিতে গড়পড়তা ১.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যোগ হতে পারে।
ভবিষ্যতের পথে এক সাহসী পদক্ষেপ : সমাজ ও রাষ্ট্রের কাঠামোয় যদি সত্যিকারের টেকসই পরিবর্তন আনতে হয়, তবে তার মূলে থাকতে হবে দক্ষ, আত্মনির্ভর ও উদ্যমী যুব সমাজ। আর্ন প্রকল্প সেই কাঠামো গড়ার একটি সাহসী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে শুধু নয় লাখ তরুণ-তরুণীর জীবন বদলাবে না—পরিবর্তনের ঢেউ পৌঁছাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ ও নেতৃত্ব কাঠামোর গভীরে।
যখন দেশের গ্রামে, শহরে কিংবা পাহাড়ি অঞ্চলের কোন এক তরুণী আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলবে আমি এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছি, তখনই বুঝতে হবে আর্ন প্রকল্প তার গন্তব্যে পৌঁছাতে শুরু করেছে।
রিপোর্টার্স২৪/ ঝুম