বিশেষ প্রতিনিধি, রিয়াদ হাসান।।
রিপোর্টার্স ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যে সোমবার ভোরে ত্রাণ সংগ্রহে জড়ো হওয়া মানুষের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫৬ জন। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৮ জন ছিলেন খাদ্যের জন্য বিতরণকেন্দ্রের সামনে অপেক্ষারত ক্ষুধার্ত বেসামরিক মানুষ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে স্থানীয় স্বাস্থ্য সূত্রের বরাতে।
মার্কিন ও ইসরায়েলি সহায়তাপুষ্ট বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) পরিচালিত বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলটিতে এসব কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত হলেও বহু বিশ্লেষকের মতে সেগুলো পরিণত হয়েছে ‘মানবিক কসাইখানায়’।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফোলকার টুর্ক ইসরায়েলের এ ধরনের সামরিক কৌশলকে ‘ভয়াবহ ও অমানবিক’ বলে অভিহিত করেছেন। জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের বার্ষিক প্রতিবেদনে তিনি বলেন, ইসরায়েল খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে এবং জীবনরক্ষাকারী সহায়তা অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, ক্ষুধার্ত মানুষের ওপর এমন প্রাণঘাতী হামলার নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত হওয়া উচিত। পাশাপাশি ইসরায়েলি নেতাদের ‘মানবতাবিরোধী’ ভাষ্য নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন টুর্ক।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলের টানা ২০ মাসের আক্রমণে এখন পর্যন্ত ৫৫ হাজার ৩৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কয়েক হাজার শিশু রয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার ভোর ৪টার দিকে রাফাহ শহরের ফ্ল্যাগ রাউন্ডআবাউটে (জিএইচএফ-এর প্রধান বিতরণকেন্দ্রের কাছে) ইসরায়েলি সেনারা সহায়তা প্রত্যাশী জনতার ওপর গুলি চালায়। হেবা জুদা ও মোহাম্মদ আবেদ নামে দুজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, চারপাশ থেকে গুলি আসছিল, সবাই নিচে পড়ে যাচ্ছিল। তাঁরা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে তাদের পরিবারে খাদ্য জোগাতে এই বিপজ্জনক পথে বারবার আসছেন তারা।
উত্তর গাজায় তিনজন এবং গাজা সিটিতে আরও দুইজন সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জিএইচএফ-এর বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয় মে মাসের শেষদিকে।ওই সময় তিন মাসের সর্বাত্মক অবরোধ কিছুটা শিথিল করে ইসরায়েল। তবে তাতেও যথেষ্ট খাদ্য বা ওষুধ প্রবেশের সুযোগ মেলেনি।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো জিএইচএফ-এর সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের মতে, এই সংস্থাটি মূলত ইসরায়েলি সামরিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেয় এবং ফিলিস্তিনিদের মানবিক চাহিদাকে পাশ কাটিয়ে চলে।
রাফাহ ও নেটজারিম করিডোরে একাধিক প্রাণঘাতী হামলার পর সম্প্রতি জিএইচএফ-এর কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল।
মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহর থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজজুম বলেন, বর্তমান ত্রাণ ব্যবস্থায় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা ও হতাশা তৈরি হয়েছে। ক্ষুধার্ত মানুষেরা এখন হয় না খেয়ে মরছেন, নয়তো একটি আটার ব্যাগ পাওয়ার জন্য জীবন ঝুঁকিতে ফেলছেন।
রিপোর্টার্স২৪/আরএইচ